আমি একদিন নানা বাড়ি ঈদে ঘুরতে যাওযার গল্প বিস্তারিত

আমি একদিন নানা বাড়ি ঈদে ঘুরতে যাওযার গল্প বিস্তারিত


নানা বাড়িতে কি  হলো। দায় এসে পড়লো আমার মায়ের উপর। আমাদের বাড়িটা নানা বাড়ির পাশেই। আসা-যাওয়াও খুব বেশি। কিন্তু বিত্ত,বৈভবে ব্যবধান আকাশ-পাতাল। মামারা অনেক বড়লোক। বিশাল ব্যবসা তাদের বাজারে। টাকা পয়সার তেমন কোনো কমতিই নেই। অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনও বড়লোক। গরিব বলতে আমরাই। তাই কোনো কিছু ঘটলেই দোষ হয় আমাদের। ভালোই অবস্থাপন্ন ছিলাম। আব্বা চাকরি করতেন থানার হেড পোস্টমাস্টার হিসেবে; সরকারি চাকরি। কিন্তু এক দুর্ঘটনায় আব্বা মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হন। মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেন। তখন চাকরির বয়স খুব বেশি দিন ছিল না। এককালীন যা টাকা পেয়েছে বেশিরভাগই খরচ হয়েছে আব্বার চিকিৎসার পেছনে। পেনশনও খুব কমই পাচ্ছে। অনেক জমি-জমা আছে আমাদের। কিন্তু চাচারা অনেক ঠকায়। জমি-জমা দেখাশোনা করেন চাচারা। খুব সামান্য টাকা তুলে দেন আমাদের হাতে। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর ধরে। 


গতকাল কো'রবানির ঈদ ছিলো। বড় একটি গ'রু কো'রবানি দিয়েছিলেন তিন মামা মিলে। আজ আমরা এসেছি নানা বাড়িতে। আরও অতিথি এসেছে এখানে। আমার অন্যান্য খালারাও এসেছে। নানা বাড়িতে অন্যান্য মেহমানদের যেরকম দাম দেয়া হয় আমাদেরকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। এটা তো সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি। আজ ঘটেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন ঘটনা। কিছুক্ষণ আগে  দু'দুটো খা'সী কো'রবানি দিয়েছে মামারা। গরিবদেরকে ভা'গেরটা দিয়ে মাংস নিয়ে এসেছে বাড়িতে। কিন্তু এক পাতিল মাংস নাকি গায়েব হয়ে গেছে। এখন দায় এসেছে আমার মায়ের উপর। বড় মামি তো সবার মাঝে দাঁড়িয়েই আমার মায়ের কথা বললেন, 'মনিরার স্বামী তো সবসময় ভালো-মন্দ খাইতে চায়। ওই চু'রি করছে খা'সীর মাংস।আমার মায়ের নাম মনিরা। ছল ছল চোখে মা জবাব দিলেন, 'দেখেন বড় ভাবি, আমি গরিব হইতে পারি। কিন্তু আমিও কো'রবানি দেই। এইবারও দিছি। ফ্রিজে গ'রুর মাংস আছে আমার। আমি তো ঐ মাংসই খাওয়াইতে পারমু আমার স্বামীরে! চু'রি করতে যাইমু ক্যান?'


চুপ কর তো! সবসময়ই এই বাড়ির জিনিসের দিকে তোর নজর! তোরে না দিয়া কি আমি কিছু খাই? তারপরও চু'রি কইরা আমার বউর সামনে অপমান করোস ক্যান?'--মা'কে ধ'মকিয়ে বললেন বড় মামা। মেহমানসহ বাড়ির অন্যান্য লোকও তাদের সাথেই সায় দিচ্ছিল। কারণ তারা সবাই বড়লোক। গরীব শুধুই আমরাই। তাই সব দোষ আমাদেরই। আমি ইন্টারমিডিয়েট পাশ করেছি। ভালো একটা ভার্সিটিতে চান্স পাবার জন্য কোচিং করছি। আমার সহ্য হলো না মায়ের উপরে দেয়া এই অপবাদ। বারবার মাকে অপবাদ দিয়েছে ওরা। কেউ চায় না আমরা এই বাড়িতে আসি। মা'কেই মানাতে পারি না। দৌড়ে দৌড়ে চলে আসে বাপের বাড়িতে। ওরাও দায় এড়াতে বিভিন্ন প্রোগ্রামে দাওয়াত দেয় ঠিকই। কিন্তু সব মেহমানের সাথে বসিয়ে খাওয়ায় না। সবার শেষে যা থাকে তাই খেতে দেয়। কত বড় যেন বোঝা আমরা! 


জীবনে কোনো কিছুতেই আমরা কখনো সাহায্য নেই নি নানা বাড়ি থেকে। আজ ভরা বাড়িতে তাদের অন্যায় অপবাদে চুপ করে থাকবো কেন? আমিও সমান জোর গলায় জবাব দিলাম, 'কি প্রমাণ আছে যে আমার মায় চু'রি করছে,তোর মা'র এই বাড়িরটা না খাইলে খাওন হজম হয় না।'--বড় মামী জবাব দিলেন।আমি এসব জিজ্ঞেস করি নাই! আমি জানতে চাইছি কি প্রমাণ আছে যে আমার মায় আজকে খা'সীর মাংস চু'রি করছে?তোগো বাড়ির ফ্রিজে যায়া চেক করলেই সব পাওয়া যাইবো!'--বড় মামা বললেন। চলেন তাইলে আমাগো বাড়িতে! ফ্রিজ চেক করবেন!আমি চিৎকার করে জবাব দিলাম।


আমরা এত ছোট মন-মানসিকতার না! এক পাতিল মাংসের জইন্য ননদের বাড়ির ফ্রিজ চেক করমু! যা হইছে, হইছে! এইবার থাম!'--বড় মামি প্রসঙ্গ এড়াতে বললেন।কত বড় মন-মানসিকতা আপনার! এতো সাধু সাধু কথা বলছেন এখন! আপনি নিজে প্রমাণ করবেন যে আমার মা চো'র! প্রমাণ করতে পারলে আমার মায়ের বিচার হবে! অন্যথায় আপনার বিচার হবে!কত বড় সাহস রে তোর? আমার বাড়িতে দাঁড়ায়া তোর বড় মামির বিচার করতে চাস! সব কথা ভুইল্যা গেছোস নাকি? এই বাড়িতে আসলে তোর বড় মামিই কিন্তু তোগোরে সবকিছু খাওয়ায়!'--বড় মামা চেঁচিয়ে ধ'মকের সুরে বললেন। হ্যাঁ খুব খাওয়াইছে তো! তার চেয়ে বেশি চোরের অপবাদ দিছে আপনার বউ |


মা এসে আমার গালে ক'ষিয়ে চ'ড় দিলেন, 'তোর বড় মামার মুখে মুখে তর্ক করোস! শরম লাগে না?বুঝলাম মা চাচ্ছে না আমি তাদের সাথে তর্কে জড়াই। ভাই-বোনসহ মাকে নিয়ে আমি চলে এলাম নিজ বাড়িতে। আব্বা বাড়িতেই ছিলেন। বাড়ি এসে দেখি কিভাবে কিভাবে যেন আমার দাদা বাড়িতে খবর চলে এসেছে; আম্মা চু'রি করছে। এগুলো সব নানা বাড়ির লোকদেরই কান্ড। হয়তো কোন ভাবে জানিয়ে দিয়েছে। এখানে চাচা,চাচি,ফুফুসহ বাড়ির মানুষ সবাই আম্মাকে নিয়ে হাসছে। আম্মা কোনো কর্ণপাত করলো না। শুধু বললো, 'চুপ কইরা থাক! সবকিছুরই একদিন বিচার হইবো!এরমধ্যে পেরিয়ে গেছে বেশ কয়েকটি মাস। কিছুদিন পরে আবার কোরবানির ঈদ। আমার মাকে চো'র সাব্যস্ত করেছিলেন বড় মামী। তার জীবনে ঘটেছে বিচিত্র ঘটনা। 

Post a Comment

Previous Post Next Post