আদ্রিতা জান্নাত অরিন লেখা সুন্দর গল্প 06 জুন

  

গল্প শুরুতে নোটন ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে গাড়ি করে অফিসের জন্য বের হয়ে যায়। অফিসে পৌঁছে দেখে সব স্টাফ ঠিক সময়ে তাদের কেবিনে রয়েছে। নোটন গিয়ে নিজের কেবিনে বসে যায় আর একজন কর্মচারীকে ডাক দেয় আর বলে।এই শহরের যতো বড়ো ছোট সব ধরণের কোম্পানির সাথে আমার মিটিং ঠিক করো। আর আমাদের যতো শেয়ার রয়েছে তাদের সবাইকে আমার সাথে জরুরি দেখা করতে বলো। এবং আমাদের যতো গার্মেন্টস কর্মী রয়েছে তাদের সমস্যা যাতে আমার কাছে বলতে পারে সেইজন্য একটা টিম গঠন করো। প্রতিটা কাজ যেনো খুব তাড়াতাড়ি হয়, ওকে ম্যাম হয়ে যাবে। 



নোটন কথাটা বলে অফিসের কিছু ফাইল চেক করতে থাকে  অন্যদিকে আহনাফ চৌধুরী মাথায় এখন অনেক চিন্তা। তার বন্ধুদের কাছ থেকে সাহায্য চেয়েছে কিন্তু কেউ কোনো রকমের সাহায্য করতে রাজি হচ্ছে না। আর নোটন বলেছে কালকে থেকে এই বাড়িতে তাদের সকলের খাওয়া বন্ধ এখন সে কি করবে সেটা বুঝতে পারছে না। এক রাতের মধ্যে টাকা কোথা থেকে জোগাড় করবে নিজের পরিবারের মুখে খাবার কি করে তুলে দিবে। আহনাফ চৌধুরী যখন চিন্তায় মগ্ন রয়েছে তখন নাবিলা বেগম রুমে আসে ওনি এতোখন রান্না করছিলেন। নোটন বাড়ির কাজের লোককে বলে দিয়েছে এখন থেকে প্রতি বেলার রান্না তাদের করতে হবে। নাবিলা বেগম বলে - আহনাফ কি হয়েছে তোমার এতো টেনশন কোনো করছো তুমি? এতো টেনশন করলে তোমার শরীর অসুস্থ হয়ে যাবে? নাবিলা টেনশন না করলে কি করব বলো তুমি? কালকে সকাল থেকে পরিবারের সকলের খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিবে নোটন। এইদিকে কেউ কোনো সাহায্য করছে না আমাদের কি করে পুরো পরিবার চালাবো বুঝতে পারছি না.



নাবিলা বেগম আহনাফ চৌধুরীকে শান্তনা দেওয়ার অনেক চেষ্টা করে কিন্তু ওনার সকল চেষ্টা বৃথা যায়। আহনাফ চৌধুরী কিছু একটা মনে করে বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়। নাবিলা বেগম জিজ্ঞেস করে কোথায় যাচ্ছে কিন্তু ওনি কোনো উত্তর দেন নাই। নোটন এখন একটা জরুরি মিটিং নিয়ে বিজি আছে আজকে কোম্পানির সকল শেয়ারের মালিকের সাথে তার কাজ আছে। চৌধুরী কোম্পানির অবস্থা খুব একটা ভালো না সব জায়গা থেকে কোম্পানির মালের উপর খারাপ রিভিউ আসছে। তাই নোটনের এই মিটিং করা জরুরি ছিলো যার জন্য প্রায় দুই ঘণ্টার ও বেশি সময় সকল শেয়ারের সাথে মিটিং হয়।নোটন মিটিং শেষ করে নিজের কেবিনে ফিরে আসে চেয়ারে বসে রেস্ট নিতে থাকে তখন একজন কর্মচারী আসে আর বলে - ম্যাম একটা খবর রয়েছে জরুরি? 



কি খবর?  ম্যাম আহনাফ স্যার আমাদের কোম্পানির কলকারখানায় শ্রমিক হিসাবে জয়েন করেছে। ওনার বেতন দশ হাজার টাকা হবে আর ওনাকে দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ করতে হবে ।কর্মচারীর মুখে আহনাফ চৌধুরী শ্রমিক হিসাবে অফিস জয়েন করার কথা শুনে নোটনের মুখে একটা বিজয়ের হাসি ফুটে উঠে। নোটন চেয়ার থেকে উঠে পড়ে আর বলে - ওয়াও এইটা সত্যি সুসংবাদ ফাইনালি আহনাফ চৌধুরীর অহংকার মাটিতে মিশে গেলো। পকেটে টাকা আর পেটে খাবার না থাকলে মানুষ অহংকার দুই মিনিটে শেষ হয়ে যায়।নোটন কোনো কথা ভেবে কর্মচারীকে বলে - শোন কোম্পানির সকল শ্রমিকে পাঁচ হাজার টাকার বোর্নাস দাও। বলবে এইটা কোম্পানির থেকে তাদের জন্য একটা পুরস্কার আর আহনাফ চৌধুরীকে ও দিবে টাকা ।



কর্মচারী কেবিন থেকে চলে যায় আর নোটন বসে থাকে নোটন নিজের ফোন বের করে তার বাবাকে কল করে। তার বাবা কল রিসিভ করে আর বলে - কি হয়েছে নোটন কোনো সমস্যা? চৌধুরী বাড়ির কারো সাথে কি কোনো ঝামেলা হয়েছে? ওরা কি তোমার পরিচয় জেনে গেছে?  আরে আব্বু এতো টেনশন করো না আমার জন্য আমি একদম ঠিক আছি কি হবে আমার। আর শোনে আব্বু তোমার জন্য একটা গুড নিউজ আছে ফাইনালি আহনাফ চৌধুরী শ্রমিক হিসাবে এই কোম্পানি জয়েন করেছে ।সত্যি মানে আহনাফ চৌধুরী আর শ্রমিক? যেই মানুষ কখনো কোনো গরীব মানুষের ছায়া ও নিজের উপর পড়তে দেয় নাই। আজকে সে শুধু মাএ টাকার জন্য তার কোম্পানির শ্রমিকের সাথে কাজ করবে ।হুম আব্বু সেই আহনাফ চৌধুরী ওনার এইরকম অহংকারের জন্য আমার জীবন থেকে সব খুশি চলে গেছে। ওই চৌধুরী পরিবার ছোটবেলা থেকে আমার ভালোবাসা সুখ শান্তি সব কেড়ে নিয়েছে।তাই ওদের শাস্তি পেতে হবে এইটা মাএ শুরু ।তবে নোটন প্রতিশোধ নিতে গিয়ে এইটা ভুলে যেও না চৌধুরী পরিবার তোমার কে হয়৷ আহনাফ চৌধুরীর সাথে তোমার রক্তের সম্পর্ক রয়েছে তাই ওনাকে অতিরিক্ত কষ্ট দিবে না।ওরা আমাদের কষ্ট দিয়েছে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে কিন্তু ওরা আমাদের আপনজন ।হুম সেটা আমি জানি আব্বু তুমি টেনশন করো না এই নোটন নিজের সীমা সম্পর্কে জানে।চৌধুরী বাড়ির সবাইকে শাস্তি আমি দিবো কিন্তু ওরা আমার আসল শএু না আমার আসল শএু খুব তাড়াতাড়ি দেশে ফিরছে। তখন শুরু হবে প্রতিশোধের খেলা ।



নোটন তার বাবার সাথে আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলে এরপর ফোন রেখে দেয়। অন্যদিকে আহনাফ সাহেব এখন শ্রমিকের সাথে কাজ করছে তার জন্য কোনো আলাদা কেবিন দেওয়া হয় নাই। অন্য শ্রমিকরা খুব ভালো করে কাজ করছে কিন্তু ওনি করতে পারছেন না। আহনাফ চৌধুরী এইবার বাধ্য হয়ে পাশে থাকা একজনকে জিজ্ঞেস করে - এক্সকিউজ মি আপনি কি আমাকে হেল্প করতে পারবেন? পাশে থাকা একজন শ্রমিক ওনার কথা শুনে আশেপাশে কোনো কিছু খুঁজতে থাকে। আহনাফ চৌধুরী বলে। আপনি কি দেখছেন আমাকে সাহায্য করতে বলছি আপনাকে। এইসব কাজ আমি আগে করি নাই নতুন এসেছি এখানে তাই একটু দেখিয়ে দেন কি করে করব ।ওহ আপনি কাজ দেখাতে বলছেন তাহলে কি যেনে্া একুশ হলিপ না কি বললেন আমি মনে করেছি অন্য কিছু হবে। আচ্ছা দেখিয়ে দিচ্ছি কি করে করতে হয় ।আহনাফ চৌধুরী ওনার কথা শুনে বুঝতে পারে এইসব শ্রমিকরা সবাই অশিক্ষিত। কিন্তু এখন সে কি করবে নিজের পেট চালাতে হলে এইরকম মানুষের  সাথে কাজ করতে হবে । আহনাফ চৌধুরী একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে পাশের লোকটা যেমন করে দেখিয়েছে সেইরকম করে করতে থাকে কিন্তু মেশিনে অনেক কালি ছিলো। আহনাফ চৌধুরী বলে - 




এই মেশিনে এতো কালি কোনো? আর সব মেশিন এইরকম পুরাতন কোনো যতসব বিরক্তিকর। আর কালি পরিস্কার করার জন্য কি কোনো টিস্যু নাই? টিস্যু সেটা আবার কি আর কালির হাত নিজের জামায় মুছে ফেলি আমরা এরপর বাড়ি গিয়ে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলি। আর নতুন মেশিনের জন্য বড় স্যারের কাছে অনেক বার চিঠি দিয়েছি কিন্তু ওনি সেইসব পড়ে দেখেন নাই।বড় স্যারের কথা বলতে আহনাফ চৌধুরী মনে পড়ে তার কথা ওনি যখন অফিসের এমডি ছিলেন। তখন অনেক শ্রমিক তার কাছে চিঠি পএ দিয়েছে কিন্তু সেটা ওনি কখনো পড়ে দেখেন নাই। ম্যানেজারের কাছে জমা থাকতো এইসব কোম্পানির শ্রমিকের সুবিধা অসুবিধা ওনি কখনো ভেবে দেখেন নাই। তবে আজকে বুঝতে পারছে সত্যি এইরকম পুরাতন মেশিন দিয়ে কাজ করতে কতো সমস্যা হতো তাদের। আহনাফ চৌধুরী জীবনে প্রথম বার কোনো গরীবরে জন্য মনের মধ্যে খারাপ লাগা কাজ করেছে। আহনাফ সাহেব নিজের গাঁয়ের জামার দিকে খেয়াল করেন জামাটা বেশ নতুন। শহরের সবচেয়ে বড়ো ব্যন্ড থেকে শার্ট কিনেছে ওনি। এই শার্টে তাকে কালি মুছতে হবে কিন্তু পুরাতন মেশিন হওয়ার কারণে কালিতে হাত ভরে গিয়েছে। আহনাফ চৌধুরী যখন নিজের শার্টে কালি মুছতে যাবে তখন পাশে থাকা একজন বলে - আরে তুমি কি করছো নতুন শার্টে কালি লাগালে খারাপ হয়ে যাবে। দেখে মনে হচ্ছে বেশ দামী শার্ট তুমি একটা কাজ করো আমার জামায় কালি মুছো ।



কিন্তু তাহলে তোমার জামা খারাপ হয়ে যাবে? আরে সমস্যা নাই বাড়িতে গেলে বউ ধুয়ে দিবে আর আমার জামা পুরাতন। কিন্তু তোমার জামা নতুন এই নাও.আহনাফ চৌধুরী ওনার ব্যবহার দেখে অনেকটা অবাক হয়। রাত হয়ে যায় আহনাফ চৌধুরী বাড়ি ফিরে আসে আজকে তার চেহারার অবস্থা দেখে অনেকটা খারাপ লাগছে। হাতে মুখে কালি লেগে রয়েছে অনেক সময় ধরে কাজ করার ফলে তার হাতে বেশ অনেক অংশ লাল হয়ে গেছে। নোটন অফিস থেকে ফিরে এসে ছোফায় বসে থাকতে দেখে আহনাফ চৌধুরীকে। নোটন সেটা দেখে একটা নিশ্বাস ফেলে আর বলে - কি ব্যাপার শশুড় আব্বু আজকে আপনাকে একদম গরীর গরীর লাগছে। হাতে মুখে কালি কাপালে ঘাম আমার এতো বছরের জীবনে আপনাকে কখনো এইরকম অবস্থায় দেখি নাই ।আহনাফ চৌধুরী নোটনের কথাটা বুঝতে পারে কিন্তু তার আজকে রাগ হচ্ছে না৷ কারণ সারাদিন কাজ করার ফলে তার খিদা আর ঘুম দুইটা পেয়েছে ওনি তাই কোনো কথা না বলে নিজের রুমে চলে যায়। নোটন আহনাফ চৌধুরী ব্যবহার দেখে অবাক আজকে প্রথমবার তার শশুড় কোনো বড়লোকের মতো কথা না বলে রুমে চলে গিয়েছে। 


এমন সুন্দর একটা কথা গল্প পড়ার জন্য ধন্যবাদ পরবর্তী গল্প পাওয়ার জন্য আমাদের এই ওয়েবসাইটে  চোখ রাখবেন।

Post a Comment

Previous Post Next Post