রায়হান আর তার বৌ নিয়ে একটা মিষ্টি গল্প ?La historia dulce de Rayhan y su esposa que toca corazones

রায়হান আর তার বৌ নিয়ে একটা মিষ্টি গল্প


ঘরে নতুন বউ রেখে শোরগোল শুরু করেছে রায়হান,কারণ হলো তার বউ অসুস্থ, আজ তার ফুল' সজ্জা হবেনা, আর এটা তাকে কেন আগে কেউ জানায়নি, বাড়ি ভর্তি মেহমান সেদিকে তার খেয়াল নেই, পারলে সে বাড়ি মাথায় করে, সবাই এত বুঝাচ্ছে কিন্তু সে যেন আরো ফুসলে উঠছে |ফারিহা চোখেমুখে লজ্জা নিয়ে তাজা ফুলের বাস'রে বসে আছে,  কিছুটা ভয় আর সংকোচে যেন নুইয়ে পরেছে, তাকে ঘিরে বসে আছে তার ননদ, জা, এবং অন্যরা, ইতিমধ্যে তার স্বামী প্রবেশ করলো ঘরে, ফারিহা অচেনা লোকটার উপস্থিতি টের পেয়ে লজ্জায় যেন কুকড়ে গেল।




ফারিহার হাসবেন্ডের নাম রায়হান। রায়হানের ভাবী তাকে হাসতে হাসতে বললো কিরে ভাই এখন তো অনেক রাত হইছে, আশেপাশে কি ফা'*র্মেসী খোলা পাওয়া যাবে?রায়হান এমন কথায় লজ্জা পেল, তার ভাবী আবারো বলে উঠলো লজ্জা পেয়ে লাভ নেই, ভেবোনা যে বা'*সর করবা সেই প্রস্তুতি নিতে বলছি, তোমার বউ অসুস্থ তার জন্য  ন্যাপ' কিন আনতে হবে। আজ বউকে দেখেই রাত পার করো,। এই কথা বলে হাসলো সে।এই কথা শোনার সাথে সাথে রায়হান ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো, বাইরে গিয়ে ই হট্টগোল শুরু করলো, বউ অসুস্থ তাকে কেন আগে জানায়নি, আজকের রাত কি আর সে ফিরে পাবে এটাই তার কথা, আগে জানলে সে হয়তো বিয়ের ডেট পিছিয়ে দিত, কেউ কি ছিলনা যে এই কথাটা তাকে জানাতে পারতো,মুহুর্তের মধ্যে পুরো বাড়ির লোক, সকল মেহমান সবাই বিষয়টা জেনে গেলো, সবাই কানাকানি করছে ফিসফিস করছে |




খবর চলে গেলো ফারিহার কানেও, ফারিহার দু-চোখে যেন বাঁধ ভাঙা নদীর মতো অশ্রু উপচে পড়ছে, কি লজ্জা কি লজ্জা,  বিয়ের রাতেই স্বামীর এমন রুপ, মানুষ হিসেবে কেমন হবে এই স্বামী যে কিনা বিয়ের রাতে স্ত্রী কে ভোগ করতে পারবেনা বলে বাড়ি ভর্তি মেহমানের সামনে এমন সিনক্রিয়েট করে, সদ্য বিয়ে করে আনা বউয়ের সন্মানের কথাও ভাবলোনা?ফারিহা মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিলো, মনে মনে আওড়ালো.এই দিন দেখার আগে মর*ণ কেন দিলনা প্রভু?পরিবারের কথা রাখতে গিয়ে শেষে কিনা এমন ছেলেকে বিয়ে করলো যে কিনা তাকে ভো'গের সামগ্রী মনে করে বিয়ের রাতে বিছা'*নায় পাবেনা বলে সব ওলট পালট করে দিচ্ছে  এসব ভাবছে আর অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে,পরিবারকে দোষারোপ করে চলেছে আপন মনে দেখেশুনে এ কোথায় বিয়ে দিলো তাকে?তার তো বিয়ের ইচ্ছে ছিলোনা, সবে মাত্র  দশম  শ্রেণিতে উঠলো এখনই তাকে বিয়ে দেওয়ার এত তারা হলো তার পরিবারের??  বাপ বেঁচে থাকলে আজ হয়তো ভাইয়েরা এমন গাঙে ভাসিয়ে দিতনা তাকে। মা আর কি ইবা করবে ভাইয়েরা যা বলবে তাই, তাইতো সেও বাধ্য মেয়ের মতো ভাইয়ের সিদ্ধান্ত মেনে নিলো বিনাবাক্যে, নাহলে তারও তো স্বপ্ন ছিলো পড়াশোনা শেষ করে প্রতিষ্ঠিত হবার। এমন নানান কিছু ভেবে কেঁদে চলেছে ফারিহা,




কেউ একজন রুমে এসে ফারিহার হাতে একটা ঔষধ দিয়ে গেলো আর বলে গেলো,এইডা খাইয়া লও, তারপর যদি দ্যাহো তোমার শরীলেরতা কমছে তাইলে স্বামী যা কয় হুইনো, হ্যারে বাঁধা দিওনা, দ্যাহোনা কেমন পাগলামি করতাছে।ফারিহা কিছু না ভেবে বিনাবাক্যে ঔষধ খেয়ে নিলো,তার মনে হলো যেন এই সময় কেউ বি-ষ এনে দিলেই সে খেয়ে এই লজ্জা থেকে বাঁচতো ওদিকে রায়হান পরনের শেরওয়ানি খুলে ফেলছে,  তিক্ত মনে লুঙ্গি, গেঞ্জি পরে কাইকুই করছে, তার দুলাভাই জিসান সাহেব তাকে বেসিনে নিয়ে মাথায় পানি ঢেলে শান্ত করার চেষ্টা করছে,শ্রাবণ মাস, আকাশটা মেঘলা, বাইরে গুড়ি গু্রি বৃষ্টি পরছে ফারিহার মনটা ভয়ংকর রকম খারাপ,  রাত বেড়েছে তাকে একা ঘরে রেখে যে যার মতো চলে গেলো, কেউ কেউ বলে গেলো ছেলেটা রাগী ভীষণ কিন্তু মানুষ ভালো তুমি মন খারাপ করিওনা সব ঠিক হয়ে যাবে, ফারিহার শ্বাশুড়ি একবার রুমে এসে মলিন হেসে চলে গেলো, রাত আরো গভির হলো কিন্তু রায়হান ঘরে এলোনা, ফারিহা বিষন্ন মনে খাট থেকে নামলো, পরনের শাড়ি গহনা খুলে সেলোয়ার-কামিজ পরে নিলো, দূর্বল শরীর নিয়ে ওয়াশ রুমে গেলো, ফ্রেশ হয়ে মেকআপ তুলে মুখে খানিকক্ষণ পানির ঝাপটা দিয়ে পূনরায় রুমে এসে খাটের এককোনায় পা ঝুলিয়ে বসে রইলো গুটিশুটি হয়ে,,, 




প্রায় মধ্যে রাতে রায়হান ঘরে এলো, লুঙ্গি আর শার্ট গায়ে, মাথায় টুপি, শার্টের হাতা ফোল্ড করা ওযু করে এসেছে বোঝা যাচ্ছে।  তাকে দেখে ফারিহা যেন সংকোচে, ভয়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে,। রায়হান ফারিহার দিকে একপলক তাকিয়ে দৃষ্টি ঘুরিয়ে নিলো, নিজের মতো করো জায়নামাজ বিছিয়ে দু রাকাত করে চার রাকা'ত নামাজ পড়ে বেশ খানিকক্ষণ মোনাজাত করলো।ফারিহা মনে মনে আকাশ কুসুম ভেবে চলেছে,একটা মানুষের কত রুপ এটুকু সময়ে দেখলো সে, কে জানে মানুষটা আসলে কেমন, কি করে জীবন পার করবে এর সাথে?রায়হান উঠে দাঁড়ালো,  ফারিহা কিছু একটা ভেবে নানীর শিখিয়া দেয়া মতে রায়হানকে সালাম করলো, রায়হান গিয়ে বসলো ফারিহার পাশে, ফারিহা যেন ভয়ে নিজেকে আরো গুটিয়ে নিলো, পিনপতন নীরবতা, কেউ ই কথা বলছেনা, 




কিছুক্ষণ পর, ফারিহা ই ভয়ে ভয়ে শান্ত গলায় বললো.এখন কিসের নামাজ পড়লেন?রায়হান কিছুটা গম্ভীর কিন্তু শান্ত গলায় বললো.শোকরানা নামাজ, নিজে দু রাকাত আর তুমি তো নামাজ পড়তে পরছোনা তাই তোমার হয়ে দু রাকাত পড়ে দিলাম, মোনাজাত করলাম নিজে আল্লাহর কাছে চাইলাম, তোমার হয়ে ও চাইলাম, আমি তো জানিনা তুমি কি দোয়া করতে তবে আল্লাহর কাছে বলছি যেন তোমার মনের আশা, চাওয়া আল্লাহ পূরণ করে দেন।ফারিহা অবাক হলো, রায়হানের দিকে পূর্ণদৃষ্টিতে তাকালো, সে যেন কিছু সময় আগের রায়হান আর এই রায়হান কে চিনতে পারছেনা,মামুলী ব্যাপার নিয়ে যে বাড়িতে শোরগোল ফেলে দিলো সেই কিনা এখন আবার ফারিহার হয়ে নামাজ পড়ে দোয়া করলো, কি অদ্ভুত?ফারিহা কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রায়হান যেন অপ্রস্তুত হয়ে গেলো, গলা খাঁকারি দিয়ে বললো.তোমাকে অনেক সময় অপেক্ষায় রাখছি, তুমি হয়তো ক্লান্ত এখন চাইলে ঘুমাতে পারো,ফারিহা মলিন কন্ঠে বললো.আমাকে মাফ করবেন, তবে বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে আমাকে এভাবে লজ্জা না দিলেও পারতেন, ভালোবাসা,মূল্যায়ন,স্বামী স্ত্রীর মাঝের যে একটা পবিত্র সম্পর্ক সেসব কিছুই কি আপনার অনুভূতি |

Post a Comment

Previous Post Next Post